IQNA

গণতান্ত্রিক পাশ্চাত্যের গণতন্ত্র নাকি গণহত্যাতন্ত্র !

0:21 - November 27, 2023
সংবাদ: 3474713
তেহরান (ইকনা): ডেমোক্রেসি শব্দের উৎপত্তি : ডেমোক্রেসি ( democracy / democracie / demokratie) ফরাসী democratie ( জার্মান ভাষায় : demokratie ) থেকে যা লেট ল্যাটিন থেকে যা গ্রীক dēmokraia থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে এবং এই গ্রীক dēmokratia ( জনগণের ক্ষমতা ও শাসন বা গণতন্ত্রে ) দুই গ্রীক শব্দ dēmos ( জনগণ ) + kratia ( ক্ষমতা , শাসন ) থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে।
তাই ডেমোক্রেসি আসলে দেমোক্রাতিয়া থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে পঞ্চদশ শতাব্দীতে অর্থাৎ তথাকথিত রেনেসাঁর যুগে।
আমি জোক করে লেখেছি : আরবীতে দেমোক্রাতিয়ার  ( الدموقراطیة ) উৎপত্তি দুটো আরবী শব্দ : ( ১ ) দাম ( রক্ত دَمٌ ) ও ( ২ ) ক্বার্ত্ ( قَرْطٌ : টুকরো টুকরো করে কাটা , কর্তন করা ) তার মানে দামোক্রাতিয়া (দাম ওয়া ক্বার্ত) = দামোক্রাতিয়া ( রক্ত ঝড়ানো টুকরো টুকরো করে কাটার নীতি বা তন্ত্র ) ! কারণ , ডেমোক্র্যাটিক ( গণতান্ত্রিক বা গণতন্ত্রবাদী ) ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো গত তিন শতাব্দী ধরে আজ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী শত শত মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করেছে ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে এবং বর্তমানে করছে। তাহলে এই সব তথাকথিত গণতান্ত্রিক ( ডেমোক্র্যাটিক ) ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর ডেমোক্রেসির প্রকৃত অর্থ  জনগণের শাসন ক্ষমতা নয় বরং তা দাম ওয়া ক্বার্ত ( রক্ত ঝড়ানো ও টুকরো টুকরো করে কাটা বা হত্যা অর্থাৎ গণহত্যার তন্ত্র ) !!! তাহলে দেখা যাচ্ছে কার্যত ইউরোপীয় গণতন্ত্র রূপান্তরিত হয়ে গেছে গণহত্যাতন্ত্রে ) !!! আর ইসরাইলের গণতন্ত্রও ঠিক ইউরোপীয় গণতন্ত্রের মতোই আসলে তা গণহত্যাতন্ত্র । আর এর প্রমাণ হল : ঐতিহাসিক ভাবে ইসরাইল ফিলিস্তিনের নিরীহ নিরস্ত্র জনগণকে গণহত্যা ও তাদের পৈত্রিক বাস্তুভিটা ও জন্মভূমি থেকে সন্ত্রাসবাদী কায়দায় উচ্ছেদ ও বহিষ্কৃত করার মাধ্যমে ফিলিস্তিনের বুকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৪৮ সালে এবং দীর্ঘ এ ৭৫ বছরে ১৫০০০০ ফিলিস্তীনীকে মধ্য প্রাচ্যের নাকি একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ইসরাইল হত্যা করেছে যাদের প্রায় ৩২০০০ ছিল শিশু । আর এ জঘন্য গণহত্যায় এবং এ পর্যন্ত যতগুলো ইসরাইল - আরব যুদ্ধ হয়েছে সেগুলোয় পূর্ণ সাহায্য , সহযোগিতা ও সমর্থন করেছে তথাকথিত সংসদীয় গণতন্ত্রের জননী ব্রিটেন ( যুরা : যুক্তরাজ্য ) এবং গণতান্ত্রিক পাশ্চাত্য বিশেষ করে গণতান্ত্রিক মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র )। আর সাবেক সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন গণতান্ত্রিক ইসরাইল প্রতিষ্ঠায় পূর্ণ সহায়তা ও সমর্থন করেছিল ১৯৪৮ সালে। (( কারণ ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত ইসরাইল শাসন করেছে  বামঘেঁষা ইসরাইলী দলসমূহ এবং ১৯৭৭ সালের পর থেকে ২০২৩ এ সময় পর্যন্ত ইসরাইলে রাজত্ব করছে ডানপন্থী দলসমূহ । আর ১৯৪৮ সালে উর্ধ্বতন সোভিয়েত সোস্যালিস্ট নেতৃবৃন্দের অনেকেই ইহুদী বংশোদ্ভূত ছিল। আর এ কারণেই তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৪৮ সালে ইসরাইল-আরব যুদ্ধে ইসরাইলকে প্রভূত সামরিক ও রাজনৈতিক সাহায্য করেছিল । )) 
 আর এ দফায়ও ( ৭ অক্টোবর ২০২৩ ) গাযা - ইসরাইলের মধ্যকার ৫০ দিন যুদ্ধে গণতান্ত্রিক পাশ্চাত্য বিশেষ করে গণতান্ত্রিক মাযুরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) , গণতন্ত্রের জননী যুরা ( যুক্তরাজ্য ) , গণতান্ত্রিক ফ্রান্স ( লাফ্খঁস্ ) ও গণতান্ত্রিক জার্মানি ( গের্মানিয়া ) ইসরাইলকে সর্বাত্মক সাহায্য করছে । গণতান্ত্রিক ইসরাইল পশ্চিমাদের বিশেষ করে মাযুরা , যুরা, ফ্রান্স , জার্মানির সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য ও প্রকাশ্য নৈতিক সমর্থন পেয়ে নির্বিচারে বেপরোয়া এলোপাথাড়ি ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে এ পর্যন্ত ১৫০০০ এর অধিক গাযাবাসীকে হত্যা ( যাদের অধিকাংশ অর্থাৎ ৬৫% নিরীহ নারী ও শিশু) এবং ৩৩০০০ এর অধিককে আহত করেছে যাদের ৭৫% নারী ও শিশু। গাযায় এ গণতান্ত্রিক ইসরাইল ৪০০০০ টন বোমাবর্ষণ করেছে যার ৮০% মাযুরার তৈরি  এবং নিষিদ্ধ ফসফরিক বোমা ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করেছে গণতান্ত্রিক ইসরাইল গাযার বোমাবর্ষণে। এই গণতান্ত্রিক ইসরাইল গাযায় জনগণের ৫০% ঘরবাড়ি এবং বহু হাসপাতাল , স্কুল , শরণার্থীদের ক্যাম্প ও আশ্রয়কেন্দ্র , মসজিদ, গির্জা , বেসামরিক স্থাপনা ও অবকাঠামো : বিদ্যুৎকেন্দ্র , পানি সংরক্ষণের আধার ইত্যাদি বোমাবর্ষণ করে ধ্বংস করেছে এবং ওষুধ - পথ্য , খাদ্য , পানি , বিদ্যুৎ , গ্যাস ও জ্বালানি সব বন্ধ করে দিয়েছে এবং আজ ১৬ বছর ধরে গাযাবাসীদের ওপর জলে স্থলে অন্তরিক্ষে সবচেয়ে কঠোর অবরোধ আরোপ করে রেখেছে এবং গাযাকে ২•৫ মিলিয়ন গাযাবাসীর জন্য উন্মুক্ত জেলখানায় রূপান্তরিত করেছে। এগুলো তো সব যুদ্ধাপরাধ , গণহত্যা , মানবাধিকার লঙ্ঘন, নারীদের অধিকার ও শিশুদের অধিকার লঙ্ঘন , ৪০০০০ টনের অধিক বোমাবর্ষণ ও নিষিদ্ধ ফসফরিক বোমা ব্যবহারে প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস ও দূষণের অপরাধ , মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য  অপরাধ। অথচ এ সব জঘন্য অপরাধ করতে সমর্থন , সাহায্য ও ইন্ধন যুগিয়ে যাচ্ছে গণতান্ত্রিক ইসরাইলকে গণতান্ত্রিক পাশ্চাত্য বিশেষ করে মাযুরা , যুরা, ফ্রান্স ও জার্মানি এ অজুহাত দেখিয়ে যে ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। ( বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে গণতান্ত্রিক ইসরাইলের আত্মরক্ষার কোনো অধিকার নেই। এই ইসরাইল আসলে অবৈধ দখলদার, জবরলখলকারী , হানাদার, আগ্রাসী কৃত্রিম মেকি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র । এ রাষ্ট্রের বুনিয়াদ অন্যায় , অত্যাচার , নির্যাতন , গণহত্যা , প্রজন্ম হত্যা,সন্ত্রাস , বর্ণবাদ , বৈষম্য , জবরদখল , দখলদারিত্ব ও আগ্রাসনের ওপর । অবৈধ ভাবে আগ্রাসন চালিয়ে ফিলিস্তীনীদের ভূমি দখল করে এ অবৈধ সন্ত্রাসী সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠা। আর ফিলিস্তীনীরা অধিকার হত , বঞ্চিত, অত্যাচারিত বাস্তুভিটা চ্যুত , মাতৃভূমি থেকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কৃত , পরাধীন এবং তারাই ফিলিস্তীনের আসল অধিবাসী ও ভূমির মালিক। তাই তাদের অস্ত্র হাতে নিয়ে বহিরাগত জবরদখলকারী সন্ত্রাসবাদী গণহত্যাকারী যালেম আগ্রাসী ডাকাত চোর বদমাইশ তস্কর ইসরাইল ও ইসরাইলী দের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের বৈধ ও ন্যায্য অধিকার রাখে যা ধর্ম , আইন , আখলাক , বিবেক , বুদ্ধিবৃত্তি ও নীতি নৈতিকতার দৃষ্টি কোণ থেকে সম্পূর্ণ বৈধ ( জায়েয ) । ফিলিস্তীনীরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা । আর ইসরাইল অবৈধ দখলদার হানাদার। তাই তাদের বিরুদ্ধে যখন তখন এবং যেখানে সেখানে ফিলিস্তীনীরা সশস্ত্র আক্রমণ ও যুদ্ধ করার অধিকার রাখে এবং ইসরাইলের সে অধিকার নেই। গায়ের ও অস্ত্রের জোর বৈধতা দিতে পারে না ইসরাইলকে  যদিও অস্ত্র বলে ইসরাইল ফিলিস্তীনীদের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। 
   যেহেতু নিরীহ ১৫০০০ এর অধিক নারী , শিশু ও বয়স্ক মানুষকে হত্যা এবং ৩৩০০০ এর অধিককে আহত করাকে ইসরাইলের আত্ম রক্ষা বলে অভিহিত করেছে তথাকথিত গণতান্ত্রিক পাশ্চাত্য সেহেতু পশ্চিমাদের এ গণতন্ত্রকে (ডেমোক্রেসি ) রক্ত ঝড়ানো ও টুকরো টুকরো করে কাটা ও হত্যার তন্ত্র বা গণহত্যাতন্ত্র বলে অভিহিত করলে মোটেও অত্যুক্তি হবে না ।
ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
captcha