বার্তা সংস্থা ইকনা: আর সান বেরনারডিনোর লিবার্টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট জেরি ফালওয়েল বিদ্যালয়গুলোতে খ্রিষ্টান শিক্ষার্থীদেরকে অস্ত্র বহনে অনুমতি দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার ভাষায় ‘ভালো লোকজনের অস্ত্র বহন’ করা মানে ‘মুসলিমদেরকে শেষ করে দেয়া।’
তবে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়েটোন কলেজের রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক লরিসিয়া হকিন্স তার ফেইসবুক একাউন্টে হিজাব পরিহিত একটি পোস্ট দিয়ে ঘোষণা করেন যে, ‘মুসলিম নারীদের পোশাকের প্রতি সংহতি’ জানানোর জন্য তিনি হোয়েটোন কলেজে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া খ্রিষ্টান ধর্মের একটি অনুষ্ঠানে হিজাব পরিধান করবেন।
হকিন্স জানান, ‘আমি মুসলিমদের সাথে একাত্মতা পোষণ করছি, কারণ আমি একজন খ্রিষ্টান যে কিতাবে বিশ্বাস করি তারাও সেই কিতাবে বিশ্বাস করে। পোপ ফ্রান্সিস গত সপ্তাহে বলেছেন যে, আমরা সকলেই এক সৃষ্টিকর্তার আরাধনা করি।’
এমন ঘোষণার কারণে হোয়েটোন কলেজের কৃষ্ণাঙ্গ এই অধ্যাপককে তার চাকরি হারাতে হয়েছিল।
হকিন্সের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলস ফিল্ম ফেস্টিভালে ‘Same God’ নামে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
ডকুমেন্টারিটির নির্মাতা লিন্ডা মিডগেট হকিন্সের সাথে একমত প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের সবকিছুতে কিভাবে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য মেরুকরণ করা হয়েছে তা দেখাতে সচেষ্ট হয়েছেন।
‘Same God’ নামের ওই ডকুমেন্টারিটিতে অধ্যাপক হকিন্সকে দেয়া হোয়েটোন কলেজের কিছু শিক্ষার্থীর দেয়া সাক্ষাতকার তুলে ধরা হয় যারা তার আবেদনের সাথে একমত প্রকাশ করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ওরলিয়ানস এবং শিকাগোতে ও ডকুমেন্টারিটি প্রদর্শিত হওয়ার কথা রয়েছে।
লিন্ডা মিডগেট বলেন, ‘আমি মনে করি তিনি(হকিন্স) তার প্রতিবাদের ভাষা ফিরে পেয়েছেন। কারণ যখন তিনি তার চাকরি হারিয়ে ফেলেছিলেন তখন তিনি তার ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং তাকে খ্রিষ্টান এভানজেলিকাল কমিউনিটির সদস্যরাও একরকম বহিষ্কার করেছিল।’
লিন্ডা মিডগেটের মতে হোয়েটোন কলেজে যা ঘটেছিল তা ছিলো একেবারে জুতসই একটি ধাক্কা, কারণ এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে বিদ্যমান বর্ণবাদ, লিঙ্গ বৈষম্য, শিক্ষা লাভের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ইসলাম১ভীতিমূলক দিকসমূহ তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন।
কিছু খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী মনে করেন হকিন্স একজন ধর্মবিরোধী নারী, অন্যদিক কিছু খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী এও মনে করেন যে, হকিন্স তাই করেছেন যা যিশু সকল খ্রিষ্টানকে করতে বলেছেন।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হোয়েটোন কলেজ কর্তৃপক্ষ হকিন্সের সাথে এ ব্যাপারে বোঝাপড়া হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছিল।
হোয়েটন কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি লিখিত বিবৃতিতে লিন্ডা মিডগেটের তৈরি করা ডকুমেন্টারিটি সম্পর্কে অবগত রয়েছে বলে জানায়- ‘গত নয় বছর ধরে হোয়েটোন কলেজে অবদান রাখার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ ড. হকিন্সের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
লিন্ডা মিডগেটের ডকুমেন্টারিতে হকিন্সস ছাড়াও হোয়েটন কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মানগিস সম্পর্কেও বলা হয়েছিল। হোয়েটোন কলেজ কর্তৃপক্ষ যখন হকিন্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছিল তখন অধ্যাপক মানগিস হকিন্সের সাথে একত্মাবোধ জানিয়েছিলেন। অধ্যাপক মানগিস সম্প্রতি হোয়েটন কলেজের প্রভোস্ট স্টান জোন্সের সাথে আদান-প্রদানকৃত একটি ই-মেইলের কিছু অংশ প্রকাশ করেন যাতে দেখা যায় যে, স্টান জোন্স হকিন্সের কার্যকলাপকে নির্দোষ বলে দাবী করেন।
অধ্যাপক মানগিস বলেন, হকিন্সের পাশে দাঁড়ানো আমার কর্তব্য ছিল, অন্যথায় আমি তাদের মত হয়ে যেতাম যারা ‘লোকজনকে হয়রানি করে শুধুমাত্র মহিলা, কৃষ্ণাঙ্গ এবং মুসলিম হওয়ার কারণে।’
লিন্ডা মিডগেটের ডকুমেন্টারিটিতে অধ্যাপক হকিন্সের নিজের রাজ্য ওকলাহোমার কিছু চিত্র ধারণ করা হয়েছে। সেখানে হকিন্সের পরিবার এবং কিভাবে তিনি একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে প্রতিদিন চার্চে গিয়ে ধর্ম-কর্ম পালন করতেন তা দেখানো হয়েছে। হকিন্সের দাদা যুক্তরাষ্ট্রের একজন মন্ত্রী ছিলেন তাও ডকুমেন্টারিটি তে দেখানো হয়।
অনেক সমালোচনাকারী এটাও দাবি করেছেন যে, হকিন্স একজন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী নয় কারণ তিনি খ্রিষ্টান এবং মুসলিমরা একই সৃষ্টিকর্তার আরাধনা করে এমনটি বলে মুসলিমদের পাশে দাঁড়াতে চান । তবে হিকিন্স জানিয়েছেন তিনি একজন ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টান
তিনি বলেন, ‘আমি ওকলাহোমা রাজ্যের একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী, অন্য সবার মত যিশুকে ভালোবাসি।’
হকিন্স পরবর্তীতে ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃতি বিষয়ে একটি ডিগ্রি নেন এবং বর্তমানে সেখানে ধর্ম এবং রাজনীতি বিভাগে পাঠদান করেন।
লিন্ডা মিডগেটের মতে লস এঞ্জেলসে তার ডকুমেন্টারিটির উদ্বোধনী প্রদর্শনের পরে অনেক দর্শক তাদের আবেগ দিয়ে হকিন্সের প্রতি একাত্মা প্রকাশ করেছেন।
ডকুমেন্টারিটির পোস্টারে একজন হিজাবী মুসলিম নারীর একটি আলোকচিত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
ডকুমেন্টারি টির প্রদর্শনীর পরে হকিন্সের কাছে যে সব প্রতিক্রিয়া এসেছিলো তা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন আমি এতে খুব গর্ববোধ করছি।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এটি সকল খ্রিষ্টান, মুসলিম এবং যারা কোনো ধর্মেই বিশ্বাস করে না তাদের সকলের উদ্দেশ্য একটি ভালোবাসার চিঠি।’
তিনি ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ নিউ টেস্টামেন্ট থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘সাক্ষ্য দেয়ার জন্য একটি মহান মেঘ।’রিলিজিয়ন নিউজ ডট কম।